সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আসলে কী চান?

সম্প্রতি সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া, সিনেমা হল খুলে দেওয়া, উন্মুক্ত কনসার্ট আয়োজন করাসহ নানা সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন সৌদি আরবের সিংহাসনের উত্তরাধীকারি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। কিন্তু খুবই অল্প সময়ের মধ্যে এই ব্যাপক পরিবর্তন আনতে চাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে মোহাম্মদ বিন সালমান আসলে কী চান?

তার এই হঠাৎ বদলে যাওয়াকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অংশ হিসেবেই গণ্য করছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতেই ওহাবি ইসলাম থেকে বেরিয়ে এসে নিজের মতো করে ধর্মীয় আইন জারি করতে চাইছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

গত বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের যুবরাজ হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়ার এক বছর পূর্তি করেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। বার্তা সংস্থা এএফপির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এই এক বছরে যুবরাজ এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা রক্ষণশীল সৌদি আরবকে স্রেফ ঝাঁকুনি দিয়েছে। তাঁর হাত ধরেই পরিবর্তনের পথে হাঁটছে দেশটি।

কিন্তু এই পরিবর্তন আসলে কী রকম? ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের একমাত্র লক্ষ্য হলো নিজের আধিপত্য টিকিয়ে রাখা। এ জন্যই তিনি ধর্মীয়ভাবে গোঁড়া ও প্রগতিশীল- এই দুই পক্ষকেই চাপে রাখছেন।

এত দিন সৌদি শাসকেরা দেশটিতে কড়া ধর্মীয় অনুশাসন জারি রাখার পক্ষে ছিলেন। কিন্তু মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার পর থেকেই এই নীতিতে আমূল পরিবর্তন আনছেন। তাঁর নেওয়া বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হলো কট্টর ধর্মীয় নেতাদের কোণঠাসা করা এবং প্রগতিশীলদেরকেও চপে রাখা। এ জন্য তাঁদের জেলেও পোরা হচ্ছে।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছেন, বর্তমানে যে সংস্কার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, তার লক্ষ্য হলো আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে সৌদি শাসকেরা এখন বলছেন, ওয়াহাবিবাদ বলতে কিছু নেই। যদিও কিছুদিন আগে পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ওয়াহাবিবাদের প্রচারের রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করত সৌদি আরব।

২০১৫ সালে তার বাবা রাজা সালমান সিংহাসনে বসার পর থেকেই মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবকে ওহাবি ইসলাম থেকে বের করে একটি গণমুখী, সামরিকায়িত সৌদি জাতীয়তাবাদের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করেছেন।

দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, সৌদি যুবরাজ মিশর ভিত্তিক ইসলামি বিপ্লবী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডকেও ‘বিপদ’ বলে মনে করেন। আরব বিশ্বে ব্রাদারহুডের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বলে মনে করা হয় কাতারকে। ঠিক এ কারণেই তিন মিত্রকে সঙ্গে নিয়ে সৌদি আরব কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে। দেশটির ওপর আরোপ করা হয়েছে অবরোধ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিন সালমানের এখন প্রধান তিন শত্রু- ইরান, ইসলামিক স্টেট ও মুসলিম ব্রাদারহুড। এই তিন প্রধান শত্রুর বাইরে রয়েছে ইরান সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। এই পাঁচ শত্রুকে কোণঠাসা করতে সৌদি আরবে কট্টরপন্থী ইসলামকেও দমন করা প্রয়োজন।